কাগজি লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হল

বাঙালির খাবারের পাতে এক টুকরো লেবু থাকবে না, এমনটা যেন হওয়ার নয়। লেবু যেমন সহজলভ্য, তেমনি এর গুণেরও শেষ নেই। লেবু পছন্দ করে না এমন মানুষ খুবই কম। লেবু দিয়ে ভাত খাওয়াসহ আরো বিভিন্ন কাজে লেবু ব্যবহার করা হয়। লেবু আমাদের দক্ষিণ এশিয়ার স্থানীয় গাছ। Reteach পরিবারের এই সদস্যটি বৈজ্ঞানিক নাম হল citrus Limon। আমরা সাধারণ লেবুর রঙ দেখতে পারি সবুজ রঙের হয়ে থাকে। আর পাকলে হালকা হলুদ থেকে গারো হলুদ রঙের হয়ে থাকে।  


লেবু একটি জনপ্রিয় ফল যা ব্যবহারে খাবারের স্বাদে ভিন্নতা অনুভব হয়। লেবু ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল একটি ৫৮ গ্রামের লেবু ৩০ মিলিগ্রাম এর বেশি ভিটামিন সি সরবরাহ করতে পারে। লেবু যে শুধু স্বাদ কিংবা ঘ্রাণে ভিন্নতা আনায়ন করে তা নয়, পাশাপাশি রয়েছে লেবুর উপকারিতা এবং সাথে  কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে রয়েছে কিছু অপকারিতা। রূপচর্চা থেকে শুরু করে খাওয়া পর্যন্ত প্রায় সকল কাজেই লেবু ব্যবহার করা হয়। আজ আমরা লেবুর উপকারিতা এবং অপকারিতা আলোচনা করা হল। 

পেজ সূচিপত্রঃ-

লেবুর উপকারিতা এবং অপকারিতা 

  • লেবুতে ভিটামিন সি থাকে যা এন্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে এবং ঠান্ডা লাগা প্রতিরোধ করে।
  • সামান্য গরম পানিতে লেবুর রস পরিপাক প্রক্রিয়াকে কার্যকর করে এবং লিভারকে রাখে সুস্থ।
  • লেবু শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে।
  • লেবু শ্বাসনালীর ও গলার প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
  • লেবুর খোসা শুকিয়ে গুড়ো করে ব্যবহার করা যায় গোসলের সময়। গরমে শরীরকে ঠান্ডা করবে।
  • লেবু বুক জ্বালা এবং আলসার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
  • ব্রণে লেবুর রস দিলে ব্রণ দূর হয়।
  • লেবুর রস ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
  • লেবুর রস ভিটামিন সি ক্যান্সার কোষ গঠন প্রতিরোধ করে।
  • শরীরের ভিতরের টক্সিন দূর করে, অস্রনালী, যকৃত ও পুরো শরীরকে পরিষ্কার রাখে।
  • রক্ত পরিশোধন করে।
  • লেবু অর্থাইটিসের রোগীদের জন্য ভালো। 

লেবুর অপকারিতা

  • অতিরিক্ত লেবু গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টি করে, তাই অতিরিক্ত লেবু খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • অ্যাসিডিটির সমস্যা থাকলে অতিরিক্ত লেবু খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ অতিরিক্ত লেবু খেলে বুক জ্বালা করে।
  • বেশি পরিমাণে লেবু ও লেবুর শরবত পান করলে পেটে ও তলপেটে ব্যাথা হতে পারে।
  • বেশি পরিমাণে লেবুর শরবত পান করলে শরীর দূর্বল লাগতে পারে।
  • শরীরের ওজন কমানোর জন্য একটানা লেবু খেলে কার্বোহাইড্রেট ও অন্যান্য পুষ্টিগনের অভাব দেখা দিতে পারি।
  • বেশ কিছু গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যারা অতিরিক্ত পরিমাণে লেবু পানি সেবন করেন তাদের দাঁতের এনামেল এবং ডেন্টিং ক্ষয় হয়। এবং হাইপারসেনসিটিভিটি অনুভব হতে পারে।
  • কিছু মানুষ বিশ্বাস করেন এক গ্লাস কুসুম গরম পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খাওয়ার ফলে বহুমূত্র রোগের সমস্যা হতে পারে, তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন এমন কোনো গবেষণা নেই যা প্রমাণ করে অতিরিক্ত লেবুর রস আমাদেরকে ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা ফেলতে পারে।
  • কিছু কিছু মানুষের জন্য লেবুর পানি সেবন করা তাদের মাইগ্রেনের সমস্যার কারণ হতে পারে।

রূপচর্চায় লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা । লেবুর রস চুলে দিলে কি হয় 

  • লেবুর ভিটামিন সি ত্বক ভালো রাখতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে।
  • লেবুর ত্বকের ক্ষয় দূর করে এবং  বয়সের ছাপ পড়া থেকে রক্ষা করে। 
  • লেবু ত্বকের মাতৃকোষ এবং টক ফাটা দূর করে। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে লেবু ব্যবহার করুণ। 
  • ডাবের পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করে পনের মিনিট অপেক্ষা করুণ। তারপর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটা তৈলাক্ত ত্বকে খুব ভালো কাজ করে।
  • লেবু মাথার খুশকি দূর করে।
  • লেবুতে ভিটামিন সি আছে যা অকাল বয়সের ছাপ দূর করে।
  • লেবু হাতের বা পায়ের কনুই এর কালচে ভাব দূর করে।
  • গরমকালেও ঠোঁট হতে পারে শুল্ক ও মলিন। এই সমস্যা দূর করতে লেবুর রস ও লাল চিনি মিশিয়ে স্ক্রাব তৈরি করে ঠোঁটে লাগিয়ে নিন।
  • লেবুর ও চিনির সংমিশ্রণ ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে ও কার্যকর।
  • লেবু আর বেকিং সোডা দিয়ে একসাথে মিশিয়ে দাঁত মাজলে দাঁতের হলুদভাব দূর হয় ও দাঁত ঝকঝকে করে।
  • লেবু ও চিনির মিশ্রণ আলতোভাবে ঠোঁটে মালিশ করে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

রূপচর্চায়  লেবুর  স্বাস্থ্য অপকারিতা 

রূপচর্চায় জন্য লেবুর উপকারিতা অনেক। কিন্তুু কখনও ভুলেও সরাসরি লেবু মুখে মাখবেন না। এতে আপনার ত্বক পুড়ে যেতে পারে কারণ লেবুর রস প্রচন্ড অ্যাসিডধর্মী। রূপচর্চায় লেবু ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন ধরনের উপাদানের সাথে মিশিয়ে লেবু ব্যবহার করুণ। 

লেবুর খোসার উপকারিতা 

  • লেবুর খোসায় রয়েছে পেকটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি, ফাইবার এবং খনিজ।
  • লেবু কোলেস্টেরলের মাত্রাকে কমায়। এর মধ্যে পটাশিয়াম থাকার কারণে রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতেও সাহায্য করে। 
  • লেবুর খোসায় থাকা ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। 
  • ফাইবার বা আঁশ অস্ত্রকে পরিস্কার রাখে। এটি হজমে সাহায্য করে এবং পেট ফোলাভাব সাহায্য করে।
  • লেবুর  খোসা ওজন কমাতে সাহায্য করে।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্যও লেবুর খোসা বেশ কার্যকর।
  • লেবু রক্তে শর্তকরার মাত্র নিয়ন্ত্রণ করে।
  • লেবু হাঁড়ের স্বাস্থ্য  ভালো রাখে। 
  • লেবুর খোসা মুখের বা কনুইয়ের কালো দাগ, বলি রেখা, বার্ধক্যের ছাপ দূর করতে সাহায্য করে।

লেবু ও গরম পানির উপকারিতা 

  • ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে গরম পানিতে লেবুর রস এবং মধু মিশিয়ে খেলে দেহের পিএইচ এর ভারসাম্য ঠিক থাকে। ফলে দেশের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। 
  • প্রতিদিন সকালে হালকা গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে খেলে সারা দিনের হজমশক্তি ভালো থাকে।
  • লেবু দেহের হরমোনকে সক্রিয় রাখে এবং উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
  • লেবু ভিটামিন সি স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধ করে, তাই লেবু শরবতে চিনি না খাওয়া  ভালো।
  • লেবু শরীরের অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের চাহিদা পূরণ করে এবং কিডনিকে পাথর হওয়া থেকে প্রতিরোধ করে।

পাতি লেবুর স্বাস্থ্য উপকারিতা | লেবুর জাত

  • পাতি লেবুতে আছে ফাইবার,  ভিটামিন সি, ভিটামিন-এ, ফোলেট, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, পটাশিয়াম। 
  • পাতি লেবু খেলে দেহের চর্বি কাটে ও ওজন কমাতে সাহায্য করে। 
  • পাতি লেবু পেটের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে উপযোগী। 
  • পাতি লেবুতে সাইট্রেট থাকে যা কিডনিতে পাথর হতে বাঁধা দেয়।
  • সকালে ঘুম থেকে উঠে পাতি লেবুর পানি খেলে হজম শক্তি বাড়ে এবং  কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। 
  • পাতি লেবুতে থাকা ভিটামিন সি শাক-সবজিতে থাকা আয়রন শোষণ করে যার ফলে রক্ত স্বল্পতা কমে।

পাতি লেবুর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া / অপকারিতা 

সবজিনিসের মত পাতিলেবু ও যদি আপনি বেশি খান তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। আপনি যদি পাতিলেবু বেশি খান তাহলে আপনার অ্যাসিডিটির সমস্যা দেখা দিতে পারে।

লেবুর খোসার ব্যবহার

  • লেবুর খোসা ফেস স্ক্রাব হিসেবে ব্যবহার করা হয় । এক মুঠো লেবুর খোসার পেস্টের মধ্যে ১ থেকে ২ কাপ চিনি ও ত্বকের ধরণ বুঝে ওলিভ ওয়েল মিশিয়ে নিন। এবার এই পেস্টটি ভেজা ত্বকে আলতোভাবে ঘষে লাগিয়ে নিন ও পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই স্ক্রাবটি সাপ্তাহে একবার ব্যবহার করুণ। এই স্ক্রাব ব্যবহার আপনার ত্বক উজ্জ্বল হবে।
  • ঘরের আসবাবপত্র অন্যান্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র জীবাণুমুক্ত রাখতে লেবুর খোসা ব্যবহার করুন। লেবুর পানি দিয়ে সিদ্ধ করে ছেঁকে নিন এবং এই পানির মধ্যে ভিনেগার বা বেকিং সোডা মিশিয়ে ব্যবহার করুণ। 
  • পোকামাকড়ের উপদ্রব কমাতে লেবুর খোসা ব্যবহার করতে পারেন।

পাতিলেবুর স্বাস্থ্য পুষ্টিগুণ 

  • প্রতি এক কাপ লেবুতে ২১২ গ্রাম কি কি পুষ্টিগুনত তা উল্লেখ্য করা হল।
  • ফাইবার ৫.৯ গ্রাম।
  • ভিটামিন-এ ৪৬.৬।
  • ভিটামিন-সি ১১২ মিলিগ্রাম 
  • ফোলেট ২৩.৩ মিলিগ্রাম 
  • ক্যালসিয়াম ৫৫.১ মিলিগ্রাম 
  • আয়রণ ১.৩ মিলিগ্রাম 
  • ফসফরাস ৪০ মিলিগ্রাম 
  • পটাশিয়াম ২৯৩ মিলিগ্রাম 

লেবুর খোসা খাওয়ার নিয়ম 

লেবুর পাশাপাশি লেবুর খোসাও খুবই উপকারী। লেবুর খোসা খেলে বিভিন্ন ধরনের রোগ ভালো হয়। লেবুর খোসায় ভিটামিন-সি ও সাইট্রিক এসিড থাকে যা আমাদের দাঁতের মাঁড়ি থেকে রক্ত পড়া ও জিঞ্জিতাইটিসসহ একাধিক রোগ প্রতিরোধ করে। এছাড়াও লেবু প্রতিদিন খেলে শরীরের স্ট্রেস কমা সাহায্য করে। 

চুলে লেবুর উপকারিতা 

  • লেবুতে আছে সাইট্রি  এসিড, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিন-সি যা চুল দ্রুত বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। 
  • চুল ঝলমলে ও তাড়াতাড়ি লম্বা করতে নারিকেল তেল, জলপাই তেল ও লেবুর রস একসাথে মিশিয়ে চুলে নিয়মিত ব্যবহার করুণ। 
  • চুল পড়া কমাতে চুলে লেবুর রস, ভিনেগার ও লবণের মিশ্রণ লাগান।
  • প্রাকৃতিকভাবে চুল ঝলমলে করতে লেবুর সাথে নারিকেলের পানি মিশিয়ে চুলে ব্যবহার করুণ, এটি কন্ডিশনারের কাজ করবে।

অতিরিক্ত লেবু খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা

  • অতিরিক্ত লেবু খেলে রক্তে আয়রণের পরিমাণ বাড়ায়। কারণ অতিরিক্ত পরিমানের লেবু খেলে শরীরের ভিটামিন সি এর পরিমাণ বেড়ে যায়  যেটা রক্ত অধিক পরিমাণে আয়রন সংরক্ষণ করে।
  • খালি পেটে  লেবু  খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা
  • খালি পেটে লেবু খেলে শরীরের খেদের পরিমাণ কমে।
  • খালি পেটে লেবু খেলে হজমে সাহায্য করে ও পেটের সমস্যা স্বাভাবিক ভাবে সমাধান হবে।
  • লেবুতে সাইট্রিক এসিড থাকে যা মূত্রের পরিমাণ বাড়ায় ও কিডনির কার্যক্ষমতা সক্রিয় করে।
  • লেবু ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। মেজাজ চাঙ্গা করে।
  • লেবুতে পটাসিয়াম, ভিটামিন-বি থাকে যা রক্তস্বল্পতা দূর করে।


আরো পড়ুনঃ- সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন কাকে বলে। সার্চ ইঞ্জিনে ওয়েবসাইট র‍্যাক করার সহজ উপায় 

পরিশেষে বলতে পারি

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে লেবুর গুরুত্ব অপরিসীম। আজ এই পোস্টে আমরা জানতে পারলাম লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা আমাদের জীবনে কত প্রয়োজন। যদি আমার ভুল হয় কমেন্ট করে জানাবেন।




Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url