নরমাল ডেলিভারি কি। নরমাল ডেলিভারি হওয়ার সহজ উপায়

নরমাল ডেলিভারি হওয়ার সহজ উপায় -নরমাল ডেলিভারি জন্য দোয়া -সন্তান জন্ম দেওয়া প্রত্যেক মায়ের জন্য একটি বিশেষ অভিজ্ঞতা। প্রেগন্যান্সি নিঃসন্দেহে আনন্দের  বিষয়। মা হওয়া পৃথিবীর সুন্দর অনুভূতির একটি। কিন্তুু আমাদের সকলের চিন্তার বিষয় একটি সন্তান কিভাবে হয়। নরমাল ডেলিভারি নাকি সেই কাটাকাটির ঝামেলায় যেতে হবে। আগের দিনে নরমাল প্রেগন্যান্সি ছিলো সাধারণ একটি বিষয়। 


এখন মানুষ প্রেগন্যান্সি ব্যাথা সহ্য করতে চায় না বলে সিজারিয়ান হয়ে থাকে। কিন্তুু এক গবেষণা দেখা গেছে নরমাল ডেলিভারিতে ও শিশু দুইজনই সুস্থ থাকে। প্রতিটি গর্ভবতী মহিলাই উদ্বিগ্ন থাকে তার সন্তান নরমাল ডেলিভারি হবে নাকি সিজারিয়ান হবে। প্রেগন্যান্সির সময় আপনার শরীরে অন্য কিছু অসুবিধা যদি না থাকে তাহলে কোন কাটাছেঁড়া ছাড়া আপনার নরমাল ডেলিভারি হতে পারে। তাহলে চলুন জেনে নি নরমাল ডেলিভারি হওয়ার সহজ উপায়। 

পেজ সূচিপত্রঃ-

নরমাল ডেলিভারি কি

নরমাল ডেলিভারি অর্থ হচ্ছে, সন্তান প্রসব করার স্বাভাবিক কিংবা প্রাকৃতিক পদ্ধতি। সাধারণ একজন মহিলার মাসিকের রাস্তা বা ভ্যাজাইনা দিয়ে সন্তান প্রসব করার পদ্ধতিকে চিকিৎসার ভাষায় এটাকে নরমাল ভ্যাজাইনলে ডেলিভারি বলা হয়ে থাকে। যদি আপনার শিশুটির মাথা জরায়ুর মুখ থেকে বের হতে পারলেই নরমাল ডেলিভারি সম্ভব। আপনার সন্তানের গ্রোথ এবং মাথার অবস্থানের উপর ভিত্তি করে ডেলিভারি কেমন হবে নরমাল নাকি সিজারিয়ান। আপনার গর্ভের শিশুর অবস্থান যদি উল্টা অবস্থায় থাকে তাহলে সন্তানটি নরমাল ডেলিভারি সম্ভবপর নয়।

নরমাল ডেলিভারি হওয়া কেন গুরুত্বপূর্ণ 

নরমাল ডেলিভারি হওয়া আপনার এবং আপনার সন্তান উভয়ের জন্যই কোনো ঝুঁকির কারণ হয় না। তবে এটি উভয়ের জন্য ভালো। মা এবং সন্তানের জন্য স্বাস্থ্যকর এবং নিরাপদ হচ্ছে সন্তানের নরমাল ডেলিভারি হওয়া। গর্ভবতী মহিলার যদি নরমাল ডেলিভারি হয় তার সুস্থ হতে কম সময় লাগে। তার যদি সিজারিয়ান হয় তাহলে তার সুস্থ হতে অনেক সময় লাগবে। নরমাল ডেলিভারিতে বাচ্চা হলে কিছু ব্যাকটেরিয়া বাচ্চার মধ্যে প্রবেশ করে যা বাচ্চার রোগ প্রতিরোগ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।

আরো পড়ুনঃ- কাঁঠালের পুষ্টিগুণ ১৮টি উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন 

আপনার যদি নরমাল ডেলিভারি হয় তাহলে আপনার সন্তান প্রসব করার সময় অ্যামনিয়োটিক নামের তরল পদার্থের সংস্পর্শে সন্তানটি আসে, যার কারণে সন্তানটির শ্বাসকষ্টের সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়। আর সিজারিয়ান পদ্ধতিতে আপনার জরায়ুতে অক্সিজেন কম প্রবেশ করে যার ফলে সেরে উঠতে সময় লাগে। আর নরমাল ডেলিভারিতে তার উল্টা টা হয়। তাছাড়া নরমাল ডেলিভারিতে অনেক সুবিধা আছে। 

  • নরমাল ডেলিভারি হওয়ার ক্ষেত্রে আপনার সন্তান অতি সহজেই মায়ের বুকের দুধ পান করার পদ্ধতি শিখে যায়।
  •  নরমাল ডেলিভারি কোন কাটাকাটি ঝামেলা নেই বিধায় রোগী সেরে উঠতে কম সময় লাগে। 
  • যারা নরমাল ডেলিভারি সন্তান প্রসব করে তারা সিজারিয়ান থেকে বেশি কর্মক্ষম ও সাহসী হয়ে থাকে। 
  • নরমাল ডেলিভারিতে সন্তান প্রসব বেদনা একটু বেশি সহ্য করতে হয় ঠিকই কিন্তুু একবার প্রসব হয়ে গেলে দ্বিতীয় বার আর কোন সমস্যা হয় না।
  • সন্তান প্রসবের জন্য নরমাল  ডেলিভারি শরীরের জন্য  যে কতটা ভালো সেটা সন্তান ডেলিভারির পরেই বুঝতে পারবেন।
  • ইসলাম ধর্ম বলা হয়ে থাকে নরমাল ডেলিভারি করার জন্য। 
  • যে বিষয়গুলো আপনার নরমাল ডেলিভারি সম্ভাবনাকে বাড়ায় 
  • নীচে আমরা এমন কিছু কারণ সম্পর্কে বলছি, যা নরমাল ডেলিভারি সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিতে পারে।
  • যদি গর্ভবতী মহিলার  আগে স্বাভাবিক প্রসব হয়ে থাকে।
  • গর্ভবতী মহিলার কোন স্বাভাবিক রোগ না থাকে যেমন হতে পারে হাঁপানি ইত্যাদি। 
  • যদি আপনার বয়স বেশি না হয়।
  • গর্ভবতী মহিলার এবং গর্ভের শিশুর ওজন স্বাভাবিক থাকে।
  • যদি গর্ভবতী মহিলার গর্ভাবস্থায় গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা না হয়।
  • যদি গর্ভবতী মহিলার গর্ভাবস্থায় শারীরিক ভাবে সক্রিয় থাকে।
  • গর্ভবতী মহিলার রক্তচাপ,  রক্তে সুগার ও হিমোগ্লোবিনের মাত্রা স্বাভাবিক থাকলে।

নরমাল ডেলিভারির দোয়া 

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিসে ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলার ৯৯টি গুণবাচক নাম রয়েছে, যে ব্যক্তি গুণবাচক নামগুলোর জিকির করবে, সে জন্নাতে যাবে। আল্লাহ তাআলার এ গুণবাচক নামগুলো দৈনন্দিন জীবনে পালনীয় আলাদা আলাদা আমল এবং অনেক ফজিলত ও অপকারিতা রয়েছে। 

আল্লাহ তাআলার গুণবাচক নাম সমূহের মধ্যে 

"আল-মুবদিয়ু" একটি। 

এ পবিত্র নামের আমলের মাধ্যমে গর্ভের সন্তানের এবং হেফাজত এবং সহজে নিরাপদে নারীদের সন্তান প্রসব হয়। আল-মুবদিয়ু অর্থ প্রথমবার সৃষ্টি কারী। এই অর্থ হলো আল্লাহ গুণবাচক নামের আমল করা হল।

নরমাল ডেলিভারি হওয়ার দোয়ার ফজিলত 

যদি কোনো ব্যক্তি তার গর্ভ বিনষ্টের আশংকা করে অথবা গর্ভের সন্তান ভূমিষ্ঠের স্বাভাবিক দিন অতিবাহিত হয় যে পবিত্র আল্লাহ তাআলার গুণবাচক নাম "আল-মুবদিয়ু" ৯০ বার পড়ে তার স্ত্রীর পেটের চতুর্দিকে শাহাদাত আঙুলি ঘুরায়। আল্লাহর ইচ্ছায় গর্ভের সন্তান হেফাজত থাকবে এবং গর্ভের সন্তান নিরাপদে ভূমিষ্ঠ হবে। যে ব্যক্তি সবসময় আল্লাহ তাআলার পবিত্র গুণবাচক নাম আল- মুবদিয়ু পাঠ করে, ওই ব্যক্তি মুখ থেকে এমন কথা বের হবে যা সাওয়াবের কারণ হবে।

কখন আপনার নরমাল ডেলিভারি হবে না

প্রথমবার যদি আপনি সন্তান ধারণ করেন তাহলে অনেকেই বিশ্রাম নিতে পারে না। তখন বার্থ ক্যানেল ফি থাকে। সেক্ষত্রে শিশুর ওজন অনেক বৃদ্ধি পায় আর সেসময় ডাক্তার নরমাল ডেলিভারি করার পরামর্শ দেন না।

আবার দেখা যায় অনেক মহিলা আছে তারা লম্বায় তাদের সাইজ কম থাকায় তাদের জরায়ু ছোট হয়ে থাকে তাই তাদের সন্তানও ছোট হয়। অনেক সময় দেখা যায় যে, জরায়ুর আকার ছোট কিন্তুু পেটের সন্তানের সাইজ বড়। যদি এই রকম হয় তাহলে নরমাল ডেলিভারি সম্ভব হবে না।

আরো পড়ুনঃ- কাগজি লেবুর  উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হল

আপনার গর্ভের ফুল জরায়ুর উপরে অথবা সামনে কিংবা পেছনের দিকে থাকতে পারে। নরমাল ডেলিভারি করার জন্য শিশু নিচের দিকে এবং গর্ভফুল উপরের অংশে থাকতে হবে। আর হ্যাঁ যদি এটার বিপরীত হয় তাহলে নরমাল ডেলিভারি সম্ভবপর হয় না।

নরমাল ডেলিভারিতে সন্তান প্রসব করবে কিনা তা সন্তান পেটে থাকা অবস্থায় পানির পরিমাণ দেখে বুঝতে পারা যায়। এই ক্ষেত্রে পেটে পানির পরিমাণ বেশি থাকলে সন্তান প্রসব করার সময় শিশুর মাথা তাড়াতাড়ি খুঁজে পাওয়া যায়। আর যদি শরীরে পানির পরিমাণ কম থাকলে যে নালি দিয়ে শিশু মায়ের শরীর থেকে খাবার নেয়, তাতে সমস্যা দেখার সম্ভাবনা থাকে। ৮ থেকে ২২ সেন্টিমিটার হচ্ছে নরমাল পানির পরিমাণ। আর যদি আপনার শরীরে কম পানির পরিমাণ থাকে তাহলে নরমাল ডেলিভারি সম্ভবপর হয় না। 

আপনার নরমাল ডেলিভারি হওয়ার লক্ষণ

  • একজন সুস্থ মহিলার নরমাল ডেলিভারি করা সম্ভব। যদি সে গর্ভকালীন সব নিয়ম মেনে চলে। এর সম্ভাব্য লক্ষণগুলি নিচে আলোচনা করা হল।
  • ৩০ থেকে ৩৪ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভের বাচ্চাটি সিফালিক অবস্থানে চলে আসে। তাই শিশুর মাথা চলে আসে এবং দেহটি অনেকটা নিচের দিকে চলে আসে। গর্ভাবস্থার ৩৪ তম সপ্তাহ থেকে ৩৫তম সপ্তাহের মধ্যে, যদি ভ্রূণের মাথা নিচু হয়ে যায়, তবে এটি নরমাল ডেলিভারি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। 
  • ঘন ঘন মলত্যাগ হতে থাকে করণ বাচ্চার মাথা পেলেভিক অঞ্চলের নিচের দিকে চাপ সৃষ্টি করে মূত্রাশয়কে সংকুচিত করে। তাই ঘন ঘন মলত্যাগ হতে পারে নরমাল ডেলিভারি লক্ষণ।
  • যোনি স্রাব বৃদ্ধি পাবে। এটি সাদা এবং গোলাপি রঙের হয়ে থাকে এবং কোনো ক্ষেত্রে এটাতে রক্ত মিশে থাকতে পারে। এটি একটি সুস্থ এবং নরমাল ডেলিভারি লক্ষণ বলে ধরা হয়।
  • পিঠের নিম্ন অংশে একটি ব্যথা হয় কারণ গর্বস্থ বাচ্চা এই অংশের উপর চাপ দিতে থাকে।
  • শারীরিক অস্বস্তি বাড়তে পারে। যদি এমনটা হয় তাহলে নরমাল ডেলিভারির লক্ষণ।
  • স্তনের ফোলাভাব স্বাভাবিক প্রকৃতির প্রসবের লক্ষ্যণ বলে জানা যায়। আপনি যখন প্রেগন্যান্সির শেষের দিকে পৌঁছানোর পর অনেক সময় স্তনকে ভারী মনে হতে পারে। এটি আরেকটি নরমাল ডেলিভারির লক্ষ্যণ।
  • সাধারণ প্রসব যন্ত্রণার সময় জলের থলি ভেঙে যায়। অনেক ক্ষেত্রে এটি যন্ত্রণা শুরু হওয়ার আগেও হতে পারে। সেক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা উচিত। 
  • গর্ভবতী মহিলার ভ্রূণের নিচের দিকে চলাফেরার কারণে নড়াচড়া করতে অসুবিধা হয়, তাহলে বুঝবেন আপনার নরমাল ডেলিভারি হতে পারে। 
  • প্রসবের সময় ঘনিয়ে আসার পর গর্ভবতী মহিলার মলদ্বারের পেশী আলগা হয়ে য়ায। এই করণে গর্ভবতী মহিলা  পাতলা মলত্যাগ করে। এটি নরমাল ডেলিভারি লক্ষ্যণ।

উন্নত প্রসববেদনার লক্ষণ

  • আবার নরমাল ডেলিভারি হওয়ার সময় যেসকল জটিলতা দেখা যায় তা নিচে আলোচনা করা হল। 
  • গর্ভবতী মহিলার তলপেটে গরম গরম ভাব অনুভব করা।
  • গর্ভবতী মহিলার পিঠে তিব্র আকারে ব্যাথা অনুভব করা।
  • পেশীর সংকোচ বৃদ্ধি পায় 
  • যোনি পথ থেকে রক্তপাত হয়ে থাকে। 
  • পেশীর সংকোচন ৪০ সেকেন্ড থেকে ৬০ সেকেন্ড স্থায়ী হওয়া। 

গর্ভাবস্থায় আপনার কিছু বিষয় জানতে হবে

গর্ভাবস্থায় সময়টি হচ্ছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। এই সময় আপনাকে শুধু খাদ্যভাসের দিকে নজর দিলে হবে না আরো অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে জানতে হবে। এই সকল বিষয় আপনাকে একটি সুস্থ শিশুর জন্ম দিতে সাহায্য করবে। তাহলে চলুন আমরা এইসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করি।

  • আপনাকে মানসিক চাপমুক্ত থাকতে হবে। 
  • আপনাকে হাসিখুশি থাকতে হবে। 
  • নিজেকে যতটা সম্ভব সুস্থ সচল রাখতে হবে।
  • আপনাকে সময় মত চেকাআপ করতে হবে।
  • আপনাকে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে হবে।
  • আপনাকে ফাস্ট ফুড এবং কোল্ড ড্রিংক এগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।
  • আপনাকে ক্যাফেন থেকে বিরত থাকতে হবে। 
  • আপনাকে সিগারেট এবং সকল প্রকার অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকতে হবে।
  • পরিবারকে যথেষ্ট সময় দিন।
  • আপনি ভালো মুভি এবং গান শুনন।
  • ফলমূল বেশি খাওয়া উচিত। 
  • পেটে আপনাকে চাপ দেওয়া উচিত হবে না।
  • আপনাকে রেগুলার ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা উচিত।
  • আপনাকে খাবারের রুটিনে ভিটামিন জাতীয় খাবার রাখতে হবে।
  • দীর্ঘ সময় ধরে মাথা নিচের দিকে রাখা উচিত না।
  • নিয়মিত করে ওমেগা এসিড গ্রহণ করা উচিত। 
  • আপনাকে গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিক প্রসবের বিষয়ে খেয়াল  রাখা দরকার।
  • আপনাকে প্রতিদিন ফলের রস এবং দুধ খাওয়া উচিত। 
  • সবুজ-সবজি প্রতিদিন খাবেন।

আপনার কেন নরমাল ডেলিভারি পছন্দ করা উচিত? 

এর উত্তর খুবই সহজ, সন্তান প্রসব করা হল একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া এবং আল্লাহ তাআলা মেয়েদের সেইভাবে তৈরি করেছে। সিজারিয়ান পদ্ধতির কথা বাদ দিন, জানেন কি একজন সুস্থ সবল গর্ভবতী মহিলার কোনোরকম পেন কিলারেরও প্রয়োজন পড়ে না। নরমাল ডেলিভারির সময় যদি কোনো সমস্যা দেখা দেয় তখন পেন কিলারের প্রয়োজন পড়ে। তাই সবাই নরমাল ডেলিভারি পছন্দ করে। 

নরমাল ডেলিভারি হওয়ার  সহজ উপায় 

ডায়েটঃ- প্রেগন্যান্সি জানার পর থেকে নিজের প্রতি বাড়তি যত্ন নিবেন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার খাবেন। স্বাস্থ্যকর খাবার, টাটকা শাক-সবজি, ফলমূল প্রচুর পরিমাণে খাওয়া প্রয়োজন। আপনাকে প্রতিদিন মাল্টিভিটামিন, ক্যালসিয়াম ও আয়রন সমৃদ্ধ খাদ্য রাখতে হবে।

নিজেকে হাইড্রেটেড রাখুনঃ- আপনি যদি  স্বাভাবিক ডেলিভারি চান নিজেকে হাইড্রেটেড রাখুন। আপনি এই সময় প্রচুর পরিমাণ পানি পান করুন। এতে শিশুর চাহিদা পূরণ করে। শরীরের ফ্লুইড চলাচলের জন্য পানি খুব জরুরি। তাই আপনি গর্ভাবস্থায় ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করুন। এতে করে রক্ত চলাচল ভালোভাবে করে।

স্রেচিং করবেনঃ- স্বাভাবিক প্রসবের জন্য আপনাকে অবশ্যই স্রেচিং করতে হবে। এতে করে নরমাল ডেলিভারি সম্ভাবনা অনেকাংশে বেড়ে যায়। 

গর্ভাবস্থায় আপনাকে একটিব থাকাঃ- অনেকে প্রেগন্যান্সির খবর শুনেই শুয়ে বসে কাটাতে চাই। তারাভাবে এসময় কোন কাজ করা যাবে না। এটা একদমই করা যাবে না। বরং প্রেগন্যান্সির সময় নিজেকে যতটা সম্ভব কাজের মধ্যে রাখা যায় ততো ভালো। এতে নরমাল ডেলিভারি হয়।

  • বাড়ির হালকা কাজকর্ম করতে পারবেন। 
  • চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে হালকা ব্যায়াম বা যোগাব্যায়াম করুন।
  • সকাল সন্ধ্যা হাটতে পারেন।

স্ট্রেসঃ- নরমাল ডেলিভারির জন্যে শরীর সুস্থ এবং ঝরঝরে রাখা জরুরি। স্ট্রেস বাড়লেই শরীর খারাপ হয়ে যাবে। গর্ভাবস্থায় স্ট্রেস যত কম নেয়া যায় ততো ভালো। সবসময় হাসিখুশি থাকবেন।

খেজুর খানঃ- আপনি যদি নরমাল ডেলিভারি চান তাহলে আপনি প্রতিদিন ২টি করে খেজুর খাবেন। দুধের সাথে খেজুর খাবেন। এতে করে পেশির সংকোচন হয় না।

জন্মের পরিকল্পনাঃ- গর্ভাবস্থার শুরুতেই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরিকল্পনা করে নিতে হবে। আপনার সমস্যা খুলে বলুন। ডাক্তারের পরামর্শ, নিয়মকানুন, নির্দেশ মেনে চলুন। এতে চিন্তা কম হবে।

প্রেশার ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখাঃ- গর্ভাবস্থায় আগে থেকে যাদের প্রেশার ও ডায়াবেটিস আছে তাদের তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

ম্যাসাজঃ- গর্ভাবস্থায় সাত মাসের পর মহিলাদের শরীরের নিচের অংশে মালিশ করা উচিত। এতে স্বাভাবিক প্রসবের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এবং এটি মানসিক থেকেও মুক্তি দেয়। 

যোগাব্যায়ামঃ- নরমাল ডেলিভারি জন্য যোগাব্যায়াম অত্যান্ত কার্যকরী। এতে শরীরের পেশী শিথিল থাকে। নরমাল ডেলিভারির জন্যে শরীরের পেশী শিথিল থাকা জরুরি। 

নেতিবাচক জিনিস চিন্তা করবেন নাঃ- গর্ভাবস্থায় নেতিবাচক জিনিস থেকে দূরে থাকুন। ডেলিভারি সম্পর্কে শোনা নেতিবাচক জিনিস এবং উপাখ্যানগুলিতে কোন মনোযোগ দিবেন। মনে রাখবেন প্রতিটি মহিলার অভিজ্ঞতা ভিন্ন হতে পারে।

প্রিয়জনের সাথে থাকুনঃ- প্রিয়জনের সাথে থাকা একজন গর্ভবতী মহিলাকে মানসিক ভাবে শক্তিশালী করে তোলে। তাই আপনি প্রেগন্যান্সির সময় আপনার প্রিয়জনের সাথে থাকার চেষ্টা করবেন। 

সন্তান জন্মদান সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানুনঃ- সঠিক তথ্য ভয় দূর করে। ডেলিভারি সম্পর্কে যতটা সম্ভব সঠিক তথ্য পাওয়ার চেষ্টা করুন। এটি গর্ভাবতী মহিলাকে প্রসবের প্রক্রিয়াকে আরোও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করে।

সঠিক ডাক্তার নির্বাচন করুনঃ- গর্ভবতী মহিলার জন্য খুব সাবধানে ডাক্তার নির্বাচন করা উচিত। নরমাল ডেলিভারি জন্য এমন একজন ডাক্তার বেছে নেয়া প্রয়োজন যেন গর্ভবতী মহিলার শরীরের সঠিক অবস্থার সম্পর্কে জানতে পারে। এবং নরমাল ডেলিভারি করে।

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুনঃ- গর্ভাবস্থায় ওজন বৃদ্ধি স্বাভাবিক তবে গর্ভবতী মহিলাদের খুব বেশি ওজন বাড়ানো উচিত নয়। অতিরিক্ত ওজনের কারণে প্রসবের সময় সমস্যা হতে পারে। আসলে মা বেশি মোটা হলে বাচ্চা বের হতে সমস্যা হয়।

প্রয়োজনমতো ঘুমঃ- ভালো এবং প্রয়োজনমতো ঘুম আপনার নরমাল ডেলিভারি সম্ভাবনা বাড়ায় এবং সেই সাথে আপনাকে ফিট রাখে। পর্যাপ্ত ঘুম এবং বিশ্রাম আপনার শিশুর এবং আপনার জন্য স্বাস্থ্যকর। আপনি রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাবেন এবং সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠবেন।

গর্ভাবস্থায় কি খাবেন

গর্ভবতী মহিলাদের নরমাল ডেলিভারির জন্যে তাঁদের খাদ্যের তালিকা দুগ্ধজাত খাবার,সবুজ-শাকসবজি, শুকনো ফল, চর্বিবিহীন মাংস, মৌসুমি ফল, ডিম, বেরি এবং লেবু ইত্যাদি অর্ন্তভুক্ত করা উচিত। তাদের সারাদিন প্রচুর পানি পান করে নিজেদেরকে হাইড্রেটেড রাখতে হবে।

গর্ভাবস্থায় কি খাবেন না

 কাঁচাডিম, অ্যালকোহল, সিগারেট, উচ্চ পরিমাণে ক্যাফেইন, উচ্চ পারদের মাত্রাসহ মাছ, কাঁচাপেঁপে, কাঁচা স্প্রোউট, ক্রিম দুধ থেকে তৈরি পনির, কাঁচামাংস, ঘরে তৈরি, আইসক্রিম এবং জাঙ্ক ফুড ইত্যাদি এড়িয়ে চলুন।

নরমাল ডেলিভারি জন্য কতক্ষণ সময় লাগে 

নরমাল ডেলিভারি সময় গর্ভবতী মহিলার শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে। যদি একজন গর্ভবতী মহিলার প্রথমবারের মতো নরমাল ডেলিভারি হতে থাকে,তবে এই প্রক্রিয়াটি ৭ থেকে ৮ ঘন্টা পযার্ন্ত সময় নিতে পারে।

নরমাল ডেলিভারি কতটা বেদনাদায়ক হতে পারে

নরমাল ডেলিভারি কেন ভালো তা তো জানা হলো। এবার আসি নরমাল ডেলিভারি অনেক বেদনাদায়ক কিনা। প্রসব ব্যাথা শারীরিক স্বাস্থ্য, শরীরের অবস্থা, ভুল বা কোন প্রশিক্ষণ না থাকা এবং মায়ের কম পুষ্টি এসবের উপর নির্ভর করে। এই প্রক্রিয়ায় শিশু গর্ভ থেকে জোর করে বের হয়ে আসে। এটি প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম। তাই এটি থেকে দ্রুত সেরে উঠা যায়। ব্যাথা হবে তবে সঠিক প্রস্তুতি থাকলে এই ব্যাথা সহনযোগ্য হবে। ঠিকমতো ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলাফেরা করলে উপরের সবকিছু মেনে চললে আপনার নরমাল ডেলিভারি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। 

আপনার এক্ষেত্রে কিরকম অভিজ্ঞতা হতে পারে? 

গর্ভকালীন শেষ পর্যায়ে আপনার প্রথমিক যন্ত্রণা শুরু হওয়ার সময়, আপনার বাথরুমে যেতে হবে বলে মনে হতে পারে। 

আপনার কি রকম অভিজ্ঞতা হতে পারে? 

এই সময় আপনার চাপ বাড়তে থাকায় অস্বস্তিতা বাড়বে ধীরে  ধীরে। এটা মাসিক ঋতুর সময়কাল ব্যাথা এবং পিঠে ব্যাথার মত হতে পারে। পিঙ্ক বা ডিসচার্জ শুরু হতে পারে। 

শিশু জন্ম নালীর দিকে ঠেলে সরে যেতে থাকে, এটি সক্রিয় পর্যায়। এই সময় শিশু জরায়ু থেকে ঠেলে বেরিয়ে আসে এবং যোনি নালীর মধ্যে দিয়ে এসে মায়ের দেহের বাহিরে নির্গত হয়।

আপনার জরায়ু সর্বাধিক প্রসারিত অবস্থায় এসে যায়, তাই সংকোচন আরো দীর্ঘ এবং আরো তীব্র হয়। এই সংকোচন গুলি ৫০ থেকে ৬০ সেকেন্ড ধরে চলতে পারে এবং সেগুলোর মধ্যে কেবলমাত্র ৪ থেকে ৫ মিনিট অবকাশ থাকতে পারে। আবার কখনো কখনো এক থেকে ২ মিনিটের কম ব্যবধানেও হতে পারে। এটি সবচেয়ে কঠিনতম পর্যায়। যতক্ষণ না ডাক্তার বলছেন ততক্ষণ বাচ্চার উপর চাপ প্রয়োগ করবেন না।

কিভাবে জানবেন যে কখন পুশ করতে হবে?

আপনি কখন পুশ করবেন তা এই সময়ে উপস্থিত ডাক্তারই বলে দিবে। মল ত্যাগ করার মত করে ধাক্কা দিবেন, কিন্তুু আপনার সব শক্তি দিয়ে পুশ করবেন। চিৎকার না করার চেষ্টা করুন কারণ এটি আপনার চেষ্টা করার ক্ষতি করতে পারে। সংকোচন গুলির অন্তর্বতী সময়ে বিশ্রাম নিন এবং একটি সংকোচনের শুরু হচ্ছে মনে হলে আপনি পুশ করা শুরু করবেন।








Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url